অভিষেক নায়ারের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট ছিলেন না ভারতীয় দলের প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর! সামনে এসেছে এমনই বড় তথ্য। একটা সময়ে অভিষেক নায়ারকে নিজের সহকারী কোচিং স্টাফ করার জন্য বোর্ডকে সুপারিশ করেছিলেন গৌতম গম্ভীর। তাহলে সমস্যাটা কোথায় শুরু হল? অভিষেক নায়ারকে সহকারী কোচ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন গম্ভীর। তবে জানা যাচ্ছে এবার বিসিসিআই অভিষেক নায়ারের চুক্তি আগেভাগে শেষ করতে চাইলে কোনও কথাই বলেননি গম্ভীর। বোর্ডের সিদ্ধান্তে কোনও আপত্তি জানাননি গৌতি।
হিন্দুস্তান টাইমস-এ দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গম্ভীর-নায়ার জুটি যা কলকাতা নাইট রাইডার্সে দুর্দান্ত কাজ করেছিল এবং তাদের দশ বছরের আইপিএল শিরোপার খরা কাটাতে সাহায্য করেছিল। তবে এই জুটি ভারতীয় ড্রেসিংরুমে সেইভাবে কাজ করেনি। যদিও এর সঠিক কারণ জানা যায়নি।
অভিষেক নায়ারের জন্য সমস্যাটি আরও বড় হয়ে দাঁড়ায় যখন তিনি দলের কয়েকজন সিনিয়র সদস্যের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হন। দূর থেকে এটি অবিশ্বাস্য মনে হলেও, নায়ার অতীতে দীনেশ কার্তিক, কেএল রাহুল, শ্রেয়স আইয়ার এবং বরুণ চক্রবর্তীর মতো শীর্ষ ক্রিকেটারদের সঙ্গে কাজ করেছেন এবং ব্যক্তিগতভাবে তাদের পারফরম্যান্স উন্নত করতে বড় সাহায্য করেছিলেন।
আরও পড়ুন … জানেন কোন পুরুষ ক্রিকেটারকে কেন ‘মারিয়া শারাপোভা’ নামে ডাকতেন ধোনি? CSK-র মজার গল্প
বিশেষ করে কার্তিক এবং চক্রবর্তীর ক্ষেত্রে, তাদের কেরিয়ারে পুনরুত্থানে নায়ারের অবদান অনস্বীকার্য। এমনকি কার্তিক নিজেই যখন কেকেআরের অধিনায়ক ছিলেন, তখন নায়ারকে সহকারী কোচ হিসেবে পছন্দ করেছিলেন। বিসিসিআইয়ের একটি সূত্র হিন্দুস্তান টাইমস-কে জানিয়েছে, ‘বোর্ডের কর্মকর্তারা সিনিয়র খেলোয়াড়দের কাছ থেকে ফিডব্যাক নিয়েছিলেন এবং কয়েকজন নায়ারের ড্রেসিংরুমে ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না। কয়েকদিন আগে তাকে চুক্তি নবীকরণ না করার বিষয়ে জানানো হয়েছে।’
মুম্বই ক্রিকেটের একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় এবং তিনটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলা অভিষেক নায়ারকে গম্ভীরের সুপারিশে ভারতের সহকারী কোচ হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। বিসিসিআইয়ের একটি অলিখিত নিয়ম হল, প্রধান কোচ তার সহকারী স্টাফ নির্বাচন করতে পারেন। এটি গম্ভীরের ক্ষেত্রেও বজায় ছিল, যখন তিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর রাহুল দ্রাবিড়ের স্থলাভিষিক্ত হন।
অভিষেক নায়ার ছাড়াও রায়ান টেন দুশখাতেকে ফিল্ডিং কোচ এবং মর্নে মর্কেলকে বোলিং কোচ হিসেবে সুপারিশ করেন গম্ভীর। ফিল্ডিং কোচ টি দিলীপের পারফরম্যান্সে বোর্ড এবং সিনিয়র খেলোয়াড়েরা সন্তুষ্ট ছিলেন এবং তাঁর চুক্তি তখনও শেষ হয়নি, তাই তাঁকে চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। এখান থেকেই সমস্যার সূত্রপাত।
আরও পড়ুন … মরশুমের শুরুতেই নীরজ চোপড়ার অবাক করা পারফরমেন্স! প্রথম স্থান দখল করলেন ভারতের সোনার ছেলে
গম্ভীরের সুপারিশ মান্য রাখার পাশাপাশি টি দিলীপকে রেখেই সমাধান করতে হলে বোর্ডকে অতিরিক্ত একটি পদের সৃষ্টি করতে হবে। এই প্রথমবারের মতো একজন প্রধান কোচ দুইজন সহকারী কোচ পেয়েছিলেন, যারা হলেন অভিষেক নায়ার ও রায়ান টেন দুশখাতে। গম্ভীরের মূল পরিকল্পনায় নায়ার ছিলেন ব্যাটিং কোচ।
ভারত ঘরের মাঠে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের কাছে ৩-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর থেকেই বোর্ড কোচিং স্টাফের ভূমিকা ও কার্যকারিতা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ শুরু করে। অস্ট্রেলিয়া সফর ছিল আসল পরীক্ষা। ভারত যখন বর্ডার-গাভসকর ট্রফিতে ১-৩ ব্যবধানে হারে এবং ব্যাটারদের মধ্যে কেএল রাহুল, নীতীশ কুমার রেড্ডি ও যশস্বী জসওয়াল ছাড়া অন্য সকলেই ব্যর্থ হন, তখনই বোঝা যাচ্ছিল গম্ভীরের পক্ষে তার স্টাফ ধরে রাখা কঠিন হবে।
আরও পড়ুন … নায়ারকে তো ‘বলির পাঁঠা’ করা হয়েছে! অভিষেককে সরিয়ে দেওয়ার পিছনে রয়েছে অন্য খেলা
জানা যাচ্ছে নায়ারকে ছেঁটে ফেলার বিরোধিতা করেননি গম্ভীর। ব্যাটিং কোচ থাকছেন সিতাংশু কোটাক। বোর্ড যখন গম্ভীর ও অধিনায়ক রোহিত শর্মার সঙ্গে একটি রিভিউ মিটিং করে এবং সিতাংশু কোটাককে ব্যাটিং কোচ হিসেবে নিয়োগ করা হয়, তখনই স্পষ্ট হয়ে যায় যে নায়ারের দিন শেষ। এনসিএ-তে থাকা কোটাক ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের সাদা বলের সিরিজে দলের সঙ্গে যোগ দেন এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্যও দলের সঙ্গে সফর করেন।
বোর্ড স্টাফ কমানোর সিদ্ধান্ত নিলে গম্ভীর কোনও আপত্তি জানাননি। বিসিসিআই সূত্রটি জানিয়েছে, ‘গম্ভীর আপত্তি করেননি। টেন ডেসকাট ও মর্কেলকে দলে আনার জন্য তাঁকে অনেক দরকষাকষি করতে হয়েছিল। এত তাড়াতাড়ি তাদের ছেড়ে দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না।’
বোঝা যাচ্ছে যে কোটাক ব্যাটিং কোচ হিসেবে থেকে যাবেন এবং সহকারী কোচের পদ বিলুপ্ত হতে পারে, কারণ রায়ান টেন দুশখাতে এখন ফিল্ডিং কোচ হিসেবে কাজ করবেন কারণ টি দিলীপের চুক্তিও শেষ হয়ে গেছে।