আমেরিকা ও চিনের বাণিজ্য যুদ্ধ, ভারতের অর্থনৈতিক খাতে অবদান রাখছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী বিক্রি হওয়া প্রতি পাঁচটি আইফোনের মধ্যে একটি এখন ভারতে তৈরি হচ্ছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এটি একটি বিশাল পরিবর্তন। অ্যাপল আগে চিনে তাদের বেশিরভাগ আইফোন মডেল তৈরি করত। কিন্তু এখন ভারতকে নিজের উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে দেখছে কোম্পানিটি।
জানা গিয়েছে, অ্যাপল এখন তার সমস্ত মডেলই ভারতে তৈরি করে। বাদ নেই অভিনব টাইটানিয়াম প্রো মডেলও। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলিকে ভারত সরকারের অর্থ এবং সহায়তার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতকে ইলেকট্রনিক্স তৈরির জন্য একটি বড় জায়গায় পরিণত করতে চান। তিনি ভারতে ইলেকট্রনিক্সের যন্ত্রাংশ তৈরিতে কোম্পানিগুলিকে সহায়তা করার জন্য আরও ২.৭ বিলিয়ন ডলার দিচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে।
মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৪ সালে ভারতে অ্যাপলের বিক্রি ৮ বিলিয়ন ডলার, যেখানে এর বাজার অংশীদারিত্ব মাত্র ৮ শতাংশ। এর অর্থ হল, অ্যাপলের বিক্রির অংশ কম হলেও, ভারতে আইফোনের চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। খবর মিলেছে, অ্যাপল গত এক বছরে, অর্থাৎ ২০২৪ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে ভারতে রেকর্ড-ব্রেকিং আইফোন উৎপাদন করেছে। জানা গিয়েছে, গত বছরে ২২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আইফোন তৈরি করেছে। ভারতীয় কারেন্সিতে হিসাব করে দেখলে এই মোটা টাকার অঙ্ক প্রায় ১.৮৩ লক্ষ কোটি টাকার সমান। আর এই রেকর্ড গত বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি।
অ্যাপল হঠাৎ ভারতের দিকে ঝুঁকছে কেন
মূলত চিনের উপর নির্ভরতা কমাতে অ্যাপল এই পদক্ষেপ করেছে। কোভিড লকডাউন, শুল্ক বিরোধ এবং চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ক্রমাগত বাণিজ্য উত্তেজনা অ্যাপলকে তার বাণিজ্যিক কৌশল পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অন্যান্য দেশের পণ্যের উপর সমান কর (যাকে 'পারস্পরিক শুল্ক' বলা হয়) আরোপ করার কথা বলার পর, অ্যাপল ভারতে তৈরি আরও আইফোন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাতে শুরু করে। এই মুহূর্তে, মার্কিন সরকার স্মার্টফোনের মতো ইলেকট্রনিক্স পণ্যের উপর অতিরিক্ত কর আরোপ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা অ্যাপলের জন্য সুখবর ঠিকই। তবে এই কর বিরতি বেশি দিন স্থায়ী নাও হতে পারে। এছাড়াও, চিন থেকে আসা পণ্যের উপর এখনও ২০% কর আরোপ রয়েছে। এই কারণে, অ্যাপল চীনের বাইরে আরও পণ্য তৈরি করার চেষ্টা করছে।
আইফোন কারখানাগুলো ভারতের কোথায় অবস্থিত
আইফোন মূলত তামিলনাড়ু এবং কর্ণাটকে তৈরি করা হচ্ছে। আইফোনের এই কারখানাগুলি ফক্সকন, টাটা ইলেকট্রনিক্স এবং পেগাট্রন নামক কোম্পানিগুলো পরিচালনা করে। ভারত থেকে এই আইফোনের রফতানিও দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের মতে, ভারত গত বছর ১৭.৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আইফোন রফতানি করেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে আরও জানা গিয়েছে, ফক্সকন এখন অ্যাপল সরবরাহের জন্য উত্তর প্রদেশের নয়ডার কাছে ৩০০ একর জমিতে একটি নতুন প্ল্যান্ট স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই প্ল্যান্টটি বেঙ্গালুরুর পর ফক্সকনের দ্বিতীয় বৃহত্তম কারখানা হয়ে উঠবে। কোম্পানিটি যে এলাকায় প্ল্যান্টটি তৈরি করছে সেটি একটি সেমিকন্ডাক্টর ইউনিট। এটি রয়েছে জেওয়ার বিমানবন্দরের কাছে, যা এর গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেয়। ফক্সকন কোম্পানি ভারতে কেবল আইফোন নয়, বৈদ্যুতিক যানবাহন, ডিজিটাল স্বাস্থ্য এবং শক্তি প্রযুক্তিতেও বৃহৎ পরিসরে কাজ করার পরিকল্পনা করছে।