মেরেকেটে মাস ছয়েকের রাজনৈতিক কেরিয়ার! আর তাতেই জীবন ওলটপালট হয়ে গিয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের। শেখ হাসিনা সরকারের একেবারে শেষ পর্যায়ে ভোটে দাঁড়িয়ে জিতেছিলেন তিনি। মগুরা-১ কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে বাংলাদেশের সংসদে পৌঁছেও গিয়েছিলেন।
কিন্তু, হাসিনা সরকারের পতন হতেই আওয়ামী লিগের অন্যান্য নেতা, মন্ত্রী ও কর্মীর মতো শাকিবকেও বিপাকে পড়তে হয়। তাঁর বিরুদ্ধে রুজু করা হয় একের পর এক মামলা। যার মধ্যে খুন, দুর্নীতির মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে। আর এবার সেই শাকিবকেই কার্যত বিশ্বাসঘাতক, লোভী বলে তোপ দাগলেন বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
এই বিষয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ইংরেজিতে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেছেন শফিকুল। যার ছত্রে ছত্রে রয়েছে সাকিবের প্রতি সমালোচনা, কটাক্ষ ও অভিযোগ। সেই ফেসবুক পোস্টের একেবারে শুরুতেই শফিকুল লিখেছেন, 'সাকিব আল হাসানের রাজনৈতিক পছন্দ শুধুমাত্র কোনও ভুল ছিল না, তা ছিল একটি নৈতিক ব্যর্থতা।'
শফিকুলের বক্তব্য, সাকিব রাজনীতিতে যোগদান করে ভুল করেছিলেন, তেমনটা মোটেও নয়। কারণ, সব নাগরিকের প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল - এক্ষেত্রে তিনি কাকে রাজনৈতিক সঙ্গী হিসাবে বেছে নিচ্ছেন? শফিকুল মনে করেন, শেখ হাসিনার দলে নাম লেখানোটাই সাকিবের নৈতিক ব্যর্থতা ছিল।
শফিকুলের যুক্তি, শেখ হাসিনার দলের বিরুদ্ধে যখন মানবতা লঙ্ঘনের ভূরি ভূরি অভিযোগ উঠছে, যখন আন্তর্জাতিক মহলের সেদিকে নজর রয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে তিনি কীভাবে অমন একটি দলের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধলেন! প্রেস সচিব মনে করেন, তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে মুখ খোলার বদলে তিনি সেই সরকারেই সামিল হয়েছেন। এর থেকে প্রমাণিত হয়, সাকিব আসলে নীরবে সেই সরকারের আচরণ সমর্থন করেছেন!
শফিকুলের ব্যাখ্য়া, সাকিব আসলে বাংলাদেশের আমজনতার রাজনৈতিক চাহিদা অনুধাবনই করতে পারেননি। যার অর্থ, তিনি (সাকিব আল আহমেদ) হয় রাজনৈতিকভাবে একেবারেই অজ্ঞ, অথবা তাঁর মানসিকতা আরও ক্রূর। এখানেই শফিকুল দাবি করেছেন, সাকিব হয়তো জনসেবা করার জন্য রাজনীতি করতে আসেননি। এসেছেন ব্যক্তিগত লাভের লোভে! যা আরও ভয়াবহ বলে মনে করেন শফিকুল।
প্রসঙ্গত, সদ্য সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে সাকিব আল আহমেদ দাবি করেন, হাসিনার আমলে তাঁর দলে যোগ দিয়ে বা ভোটে দাঁড়িয়ে তিনি কোনও ভুল করেননি এবং আবার ভোটে দাঁড়ানোর সুযোগ পেলে, তিনি ফের জিতবেন! এছাড়াও, বাংলাদেশে যেভাবে তাঁর নামে একের পর এক মামলা করা হয়েছে, তাঁর সম্পত্তি ক্রোক করা হয়েছে, তারও বিরোধিতা ও সমালোচনা করেন সাকিব। উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশের এই প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক দেশছাড়া।
শফিকুল তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন, সাকিব বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার হতে পারেন। কিন্তু, তাতে তাঁর সমস্ত দায় থেকে তিনি মুক্তি পেতে পারেন না! প্রেস সচিবের মতে, আওয়ামী লিগে যোগদান করে তিনি আদতে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন!