পরিস্থিতি ক্রমেই স্বাভাবিক হয়েছে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে। এই আবহে ঘরছাড়া হওয়া কয়েকশো মানুষকে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে নিজেরাই আশ্রয় শিবিরে গিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ-বিধায়করা। এই আবহে অবশেষে বন্ধ হল মালদার পারলালপুর হাইস্কুলের আশ্রয় শিবির। এর আগে গত ১১ এবং ১২ এপ্রিল মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ হিংসার জেরে বহু মানুষ গঙ্গা পার করে মালদায় এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁদের জন্যে পারলালপুর হাইস্কুলে আশ্রয় শিবির চালু করা হয়েছিল। পরে আশ্রয়প্রাপ্তরা অভিযোগ করেছিলেন, তাঁদের যে সেখানে আটকে রেখেছে প্রশাসন। মিডিয়া বা কারও সঙ্গে তাদের কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। তাদের জন্য কাউকে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতে দেওয়া হচ্ছে না। এরই মাঝে অবশ্য জাতীয় কমিশন এবং রাজ্যপাল এসে দেখা করে গিয়েছেন তাঁদের সঙ্গে। আর এবার হিংসা শুরুর একসপ্তাহেরও বেশই সময় পর ঘরে ফিরছেন কয়েকশো মানুষ।
রিপোর্ট অনুযায়ী, জঙ্গিপুরের পুলিশ সুপার আনন্দ রায়ের নেতৃত্বে পুলিশের দল গিয়ে ঘরছাড়াদের হাইস্কুলের আশ্রয় শিবির থেকে গঙ্গাঘাটে নিয়ে আসেন। প্রায় ৮-১০ দিন আগে এই ঘাটেই আতঙ্কিত হয়ে পা রেখেছিলেন এই মানুষগুলো। তবে রবিবার তাঁরা সেখানে পা রাখেন ঘরে ফেরার জন্যে। সেই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমান, সামশেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলাম, ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। পরে ঘরছাড়াদের নিরাপত্তা দিয়ে তাঁদের বাড়িও পৌঁছে দেয় পুলিশ। বর্তমানে পারলালপুরের আশ্রয় ক্যাম্পে আর কোনও পরিবার নেই।
এদিকে মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি নিয়ে জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার এসপি আনন্দ রায় জানান, এখন সেখানে পরিস্থিতি শান্ত। সবই বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। ওয়াকফের নামে যে হিংসা ও তাণ্ডবলীলা চলেছিল, তাতে ১৫৩টি মামলা দায়ের হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ২৯২ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উল্লেখ্য, মুর্শিদাবাদে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় বিক্ষোভের জেরে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল ১১ এপ্রিল থেকে। এই হিংসার জেরে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন কিশোর আছে। সে গত ১১ এপ্রিল গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। এদিকে ১২ এপ্রিল সামশেরগঞ্জে বাবা-ছেলেকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন স্থানীয়রা। এই আবহে ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ দেহ উদ্ধার করতে গেলে তাদের বাধা দেওয়া হয়েছিল। পরে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করলে তা না নেওয়ার ঘোষণা করেন নিহতের পরিবার। এদিকে এলাকায় শান্তি ফেরাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে বিএসএফ।
এদিকে ১২ এপ্রিল ধুলিয়ান পুরসভাতে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল। সেদিন একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল এবং পরে সেখানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। ধুলিয়ানে একটি শপিংমলেও লুটপাট চালানো হয়েছিল। এদিকে ফারাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলামের দাদা আলির বাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকী বিধায়ককেও হেনস্থা করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। এছাড়া জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুরের অফিসেও হামলা চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। এদিকে মুর্শিদাবাদে হিংসার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত শতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।