সীমান্তের উত্তেজনা ভারত-পাক ক্রিকেটের ময়দানে প্রভাব ফেলেছে বরাবর। অথচ ক্রিকেটবিশ্বে অ্যাশেজের থেকেও জনপ্রিয় এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের মুখোমুখি লড়াই। ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান ও পাকিস্তানের সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার কুখ্যাতি এক্ষেত্রে ক্রিকেটপ্রেমীদের বরাবর বঞ্চিত করেছে ভারত-পাক লড়াইয়ের উত্তাপ উপভোগ করা থেকে।
তবে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের বেশিরভাগই বিসিসিআই তথা ভারত সরকারের অবস্থানকে সমর্থন করে এসেছেন। ভারত বিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ না হলে পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট নয়, এটাই ছিল একমাত্র শর্ত। ২০০৮-এর মুম্বই হামলার পরে তাও পরিস্থিতি শীতল হওয়ার দিকে এগিয়েছিল। এবার পহেলগাঁওয়ের ক্ষোভ ভারত-পাক ক্রিকেটীয় সম্পর্ককে হিমঘরে পাঠিয়ে দিতে চলেছে বলা মোটেও ভুল হবে না।
ভারতীয় দল শেষবার দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ খেলতে পাকিস্তান সফরে যায় ২০০৫-০৬ মরশুমে। যদিও তার পরেও একবার ভারতীয় ক্রিকেট দলের পাকিস্তানে পা পড়ে ২০০৮ সালের এশিয়া কাপ খেলার জন্য। তবে ২০০৮ সালে আজমল কাসভরা মুম্বইয়ের সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানোর পরে আর পাকিস্তানে ক্রিকেট খেলতে যাওয়ার কথা ভাবেনি ভারতীয় দল। নিরাপত্তার স্বার্থে তো বটেই, বিসিসিআই এক্ষেত্রে ভারত সরকারের অবস্থানকে সমর্থন করেই পাকিস্তানে ক্রিকেট দল পাঠানোর চেষ্টাও করেনি।
আইসিসি ইভেন্টে বাধ্য হয়ে পাকিস্তানের মুখোমুখি হতে হয় ভারতীয় ক্রিকেট দলকে। তবে সেক্ষেত্রেও পাক ভূ-খণ্ডে খেলতে নামবে না, এই অবস্থান থেকে এক চুলও নড়েনি বিসিসিআই। নিজেদের দেশে অথবা নিরপেক্ষে কেন্দ্রে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আইসিসি ইভেন্টে মাঠে নামতে কোনও অসুবিধা ছিল না ভারতীয় দলের।
তবে পহেলগাঁও হামলার পরে বিসিসিআই আরও কঠোর হচ্ছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্রিকেট খেলা নিয়ে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড আইসিসির ইভেন্টেও যাতে পাকিস্তানের মুখোমুখি হতে না হয়, সেই চেষ্টাই করবে বলে ইঙ্গিত। অন্তত একই গ্রুপে দু'দলকে না রাখার জন্য আইসিসির কাছে অনুরোধ করবে বিসিসিআই, এমনটাই খবর।
আরও পড়ুন:- অভিনন্দন জানাতে এলেন গোয়েঙ্কা, কথাই বলতে চাইলেন না রাহুল, ভোলেননি অপমান!- ভিডিয়ো
ভারত-পাকিস্তান শেষবার দ্বিপাক্ষিক সিরিজে মাঠে নামে ২০১২-১৩ মরশুমে। সেই শেষবার পাকিস্তান দল দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে ভারত সফরে আসে। তার পরে পিসিবির তরফে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ আয়োজনের মরিয়া চেষ্টা চালানো হয়, তবে বিসিসিআই কোনও মতেই রাজি হয়নি। ১২ বছরেররও বেশি হয়ে গেল ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বন্ধ রয়েছে। মুম্বই হামলার পরেও যে দরজাটা সাময়িকভাবে খুলে গিয়েছিল, পহেলগাঁওয়ের হামলা সেই দরজায় পাকাপাকিভাবে তালা ঝুলিয়ে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, মুম্বই হামলার পরেও ক্রিকেটারদের একাংশের বিশ্বাস ছিল যে, ক্রিকেটের মাঠে রাজনীতির প্রভাব পড়া উচিত নয়। আবার অনেকের ধারণা ছিল, ক্রিকেটই পারে রাজনৈতিক মতভেদ দূর করে দু'দেশকে কাছাকাছি নিয়ে আসতে। তবে পহেলগাঁওয়ের হমলার পরে ক্ষোভে ফুটছে ভারতের ক্রিকেটমহল। ক্রিকেটাররাও এখন খোলাখুলিই স্বীকার করতে কুণ্ঠা বোধ করছেন না যে, এটা চলতে পারে না কখনই।