‘আমরা ভালো আছি। অনুগ্রহ করে ফোন করবেন না।’
এই প্রতিবেদন লেখার ঘণ্টা দুই আগে, সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বার্তাই দিয়েছেন দেবাশিস ভট্টাচার্য। পহেলগাঁওয়ে হত্যালীলার পরে প্রায় ২৪ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। টেলিভিশনে, ডিজিটাল মাধ্যমে বার বার উঠে এসেছে একটিই কথা। ‘ধর্মীয় পরিচয় জিজ্ঞাসা করার পরে হত্যা।’ আর সেখানেই খুব প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে দেবাশিস ভট্টাচার্যের নাম।
অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক দেবাশিস। তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতেই জানা গিয়েছে, কয়েক দিন ধরে কাশ্মীর উপত্যকায় পরিবারের সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছে তিনি। আর সেখানেই ঘটেছে এমন মর্মান্তিক ঘটনা। বন্দুকধারীদের বন্দুকের সামনে পড়েও বেঁচে গিয়েছে দেবাশিস। এক বেসরকারি সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, যে সময়ে গুলি চলেছি,ল, সেই সময়ে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। হঠাৎ দেখেন, চার পাশের লোকজন কলমা (বা কলেমা, ইসলামী শরিয়তের ভাষায় কলমা বা কলেমা হলো যে বাণী আল্লাহর পরিচয় দেওয়ার মাধ্যমে সত্যের পথ দেখায়) পড়ছেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনিও উঠে বসে কলমা পড়তে শুরু করেন।
(আরও পড়ুন: প্রাণ দিতে তৈরি!' ডাল লেকের ধারে উঠল আওয়াজ, অতিথির পাশে কাশ্মীর)
বেসরকারি সংবাদমাধ্যমকে দেবাশিস জানিয়েছেন, এই সময়ে একজন বন্দুক হাতে হাজির হয়, এবং তাঁর পাশের জনের মাথায় গুলি করে। বন্দুকধারী তাঁকে জিজ্ঞাসা করে, ‘কেয়া কর রহে হো?’ (কী করছো?) তিনি কোনও উত্তর না দিয়ে আরও জোরে কলমা পড়তে থাকেন। এর পরে বন্দুকধারী সেখান থেকে চলে যায়। বেঁচে যান, দেবাশিস এবং তাঁর পরিবারের মানুষ।
(আরও পড়ুন: কলমা পড়তে পারেননি, চলল গুলি, লুকিয়ে পড়ো! স্ত্রীকে বলেই জঙ্গিদের মুখোমুখি স্বামী)
সোশ্যাল মিডিয়ায় দেবাশিসের প্রোফাইল দেখলে আন্দাজ করা যায়, তিনি হয়তো বামপন্থী ভাবধারায় বিশ্বাসী মানুষ। অধ্যাপনার পাশাপাশি নাট্যপ্রেমী, নাট্যকর্মী দেবাশিস বার বার নানা সামাজিক ইস্যুতে মন্তব্য করেছেন নিজের প্রোফাইল থেকে। আপাত ভাবে তাঁকে দেখে কোনও ধর্মবিশ্বাসী বলেই মনে হয় না। বরং ধর্মচর্চার থেকে অনেক দূরে দাঁড়িয়ে সংস্কৃতি চর্চাতেই তাঁর নজর বেশি বলে মনে হয়। সেখানেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর পরিচিত কয়েক জনের মন্তব্য থেকে আন্দাজ করা যায়, হয়তো নিতান্ত অ্যাকাডেমিক কারণে কিংবা সখেই ইসলামের কলমা পাঠ শিখেছিলেন তিনি। থাকতে পারে কোনও পারিবারিক বা বন্ধুবান্ধবের প্রভাবও। আর সেই শিক্ষাই হয়তো বাঁচিয়ে দিয়েছে তাঁর প্রাণ। এমনই মনে করছেন সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর পরিচিত কেউ কেউ।