পেশায় তিনি শিক্ষক, অথচ তাঁর কাছেই রয়েছে ঠিকাদারি লাইসেন্স। তিনি আবার যে সে ব্যাক্তি নন, স্বয়ং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মণ্ডলীতে থাকা ছাত্র-উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবা বিল্লাল হোসেন। সংবাদ সংস্থা আল জাজিরার সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী জুলকারনাইন সায়ের এমনই খবরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে বাংলাদেশজুড়ে। আর যার জেরে বিতর্কে জড়িয়েছেন আসিফ মাহমুদ।পরে বাবার ভুলের জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন তিনি। (আরও পড়ুন: পহেলগাঁওয়ে হামলা খবর কখন পায় থানা? কেন ধরা পড়েনি জঙ্গিরা? FIR-এ মিলল যে তথ্য…)
আরও পড়ুন-পহেলগাঁওয়ে ধাওয়া করে প্রাক্তন ব্যাঙ্ককর্মীকে গুলি, বিবাহবার্ষিকী উদযাপনে গিয়ে নিহত ব্যক্তি
বর্তমানে আসিফ মাহমুদ উপদেষ্টা হিসাবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। এর মাঝে বুধবার রাতে হঠাৎ ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের ঠিকাদারি তালিকায় আসিফ মাহমুদের বাবা অন্তৰ্ভুক্ত হয়েছেন বলে গুরুতর অভিযোগ তোলেন সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের।পাশাপাশি মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি লাইসেন্সের ছবি পোস্ট করেন ওই সাংবাদিক। সেই সঙ্গে তিনি লিখেছেন, 'উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেনের নামে একটি ঠিকাদারি লাইসেন্সের কপি তাঁর হাতে এসেছে। এটি ২০২৫ সালের ১৬ মার্চ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী কর্তৃক ইস্যু করা হয়েছে।'
তিনি আরও জানান, 'এ বিষয়ে জানতে আমি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি প্রথমে এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান এবং কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেন। তিনি সময় নিয়ে যাচাই করে জানান, লাইসেন্সের বিষয়টি সঠিক, কিন্তু এটা তাঁর অজান্তে করা হয়েছে। স্থানীয় এক ঠিকাদার তাঁর শিক্ষক বাবাকে ঠিকাদারি লাইসেন্সটি করতে প্ররোচিত করেন।' একই সঙ্গে সাফাইয়ে উপদেষ্টা জানান, ওই লাইসেন্স ব্যবহার করে কোন প্রকল্পে কাজ করা হয়নি। তবে ছাত্র উপদেষ্টা তাঁর বাবার হয়ে সাফাই দিলেও, সাংবাদিকের পোস্টটি ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। সে দেশের নাগরিকদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, ক্ষমতার জোরেই কি শিক্ষক বাবার ঠিকাদারি লাইসেন্স বের হয়েছে? আর সে সম্পর্কে জানতেই না উপদেষ্টা?
আরও পড়ুন: আতঙ্কে যুদ্ধের প্রস্তুতি পাকিস্তানের? চলছে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা, সতর্ক ভারতে
বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন শুরু হতেই প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে আসিফ বলেন, 'আমার বাবা আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভুঁইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। স্থানীয় একজন ঠিকাদার কাজ পাওয়ার সুবিধার্থে বাবার পরিচয় ব্যবহার করার জন্য লাইসেন্স করার পরামর্শ দেন। বাবাও তার কথায় জেলা নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার থেকে একটি ঠিকাদারি লাইসেন্স করেন। দেশের যে কোন ব্যক্তি ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে যে কোন লাইসেন্স করতেই পারে। তবে আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের দায়িত্বরত থাকায় বাবার ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়ানো স্পষ্টভাবেই কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। বিষয়টি বোঝানোর পর বাবার আবেদনের প্রেক্ষিতে লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে। বাবা হয়তো কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের বিষয়টি বুঝতে পারেননি, সেজন্য বাবার পক্ষ থেকে ক্ষমা চাইছি।' এর আগে সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রক এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনকে সরিয়ে দেয়। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তারপরেই উপদেষ্টার বাবার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠতেই চর্চা শুরু হয়েছে বাংলাদেশে।