অভিষেক শর্মা ও যুবরাজ সিংয়ের সম্পর্কের কথা বর্তমানে কারোর কাছে অজানা নয়। বিশেষ করে ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তদের কাছে। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের এই ব্যাটার, যিনি এখন ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে একজন নিয়মিত ওপেনার হিসেবে জায়গা পাকা করার পথে রয়েছেন। বারবারই নিজের কেরিয়ারে যুবরাজের অবদানের কথা উল্লেখ করেছেন অভিষেক। অপরদিকে, ভারতের ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী দলের সেরা পারফর্মার যুবরাজ সিংও কখনও এই উদীয়মান বাঁ-হাতি ব্যাটারের প্রশংসা করতে ভোলেননি। যেমন ধরুন, পঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে অভিষেকের রেকর্ড গড়া ১৪১ রানের ইনিংসের পর যুবরাজ তাকে পরিণত মানসিকতার জন্য খোলা মনে প্রশংসা করেন। সেই ম্যাচের পর অভিষেক তার কৃতিত্ব যুবরাজের প্রতি সমর্পণ করেন। কিন্তু কীভাবে এই দুই বাঁ-হাতি অলরাউন্ডার—যারা স্পিনও করেন—এভাবে একে অপরের কাছাকাছি এলেন? যুবরাজের বাবা ও ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার যোগরাজ সিংহ জানালেন, এটা মোটেও কাকতালীয় ছিল না।
যোগরাজ জানান, পাঞ্জাবের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে অভিষেকের পারফরম্যান্স নজরে আসে যুবরাজের। এরপরই তিনি পাঞ্জাব ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (পিসিএ) কাছ থেকে অভিষেকের পরিসংখ্যান চেয়ে পাঠান। কিন্তু সেখান থেকে যেটা জানানো হয়, তাতে যুবরাজ চমকে যান। অভিষেককে শুধুমাত্র একজন বোলার হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
যোগরাজ বলেন ক্রিকেট নেক্সটকে, ‘যখন আমরা পিসিএ এবং কোচদের কাছে অভিষেক শর্মার পারফরম্যান্সের তালিকা চাই, জানো কী বলা হয়? ‘স্যার, ও একজন বোলার। সে বল করে।’ তখন যুবি বলল, ‘তোমরা ওর পারফরম্যান্সের রেকর্ড ভালো করে দেখো।’ যখন আমরা রেকর্ড দেখি, তখন অভিষেকের নামের পাশে ২৪টি সেঞ্চুরির তথ্য ছিল। যুবি বলল, ‘তোমরা ভুল তথ্য দিচ্ছো কেন? কেন দিচ্ছো? এই ছেলেটা ইতিমধ্যেই ২৪টা সেঞ্চুরি করেছে।’ এটা ছিল ছয়-সাত বছর আগের কথা।’
আরও পড়ুন … ভিডিয়ো: বেঙ্কটেশ আইয়ারকে আউট করার পরে কেন আগ্রাসী সেলিব্রেশন করলেন শুভমন গিল? জানা গেল আসল কারণ
যোগরাজ আরও বলেন, ‘যখন যুবি এই রেকর্ড আমার কাছে পাঠায়, ও বলে, ‘পাপা, এই খেলোয়াড়টাকে দেখো।’ আমি বললাম, ‘দেখো, তথ্য শেয়ার করাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই হল সমস্যা: কেউ কেউ হিংসা থেকে খেলোয়াড়দের শেষ করে দিতে চায়, নিজের কেরিয়ার গড়ার চেয়ে।’
নাইটপার্টি ও শৃঙ্খলাহীনতা থেকে অভিষেক ও গিলকে সরিয়ে আনেন যুবরাজ: যোগরাজ সিংহ
এই প্রাক্তন ক্রিকেটার ও খ্যাতনামা কোচ আরও জানান, কীভাবে যুবরাজ অভিষেকের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন থামিয়ে তাকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনেন। যুবরাজ তাঁকে নাইটপার্টি ও প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করা থেকে বিরত রাখেন।
আরও পড়ুন … ও নিজেকে আয়নায় দেখে প্রশ্ন করুক… রোহিত শর্মার নেতৃত্ব ও ফর্ম নিয়ে স্টিভ ওয়াহ’র সতর্কবার্তা
যোগরাজ সিং বলেন, ‘রাত জাগা পার্টি... প্রেমিকা... তখন কী হল? যুবরাজ বলল, ‘ওকে তালাবন্দি করুন।’ ও তখন যুবরাজের অধীনে চলে আসে, কারণ ওর বাবা আর সামলাতে পারছিলেন না। যুবি চিৎকার করে বলল, ‘তুই কোথায় আছিস?’ আমি শুনলাম ও চিৎকার করছে। ‘রাত ৯টা বাজে, ঘুমোতে যা। বুঝেছিস? আমি আসছি।’ এরপর ফোনটা দিয়ে ও নিজেই ঘুমিয়ে পড়ল। তারপর যুবি বলল তার বাবাকে, ‘ওকে ভোর ৫টায় উঠিয়ে দিও।’
তিনি আরও যোগ করে বলেন, শুভমন গিলের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। গিল এবং অভিষেক দুজনেই ২০১৮ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন।
আরও পড়ুন … শেফিল্ডের হার, ম্যাচের পরেই হামজা চৌধুরীর উপর আক্রমণ! অভিযোগের আঙুল বার্নলির সমর্থকদের দিকে
যুবরাজের সঠিক পথনির্দেশে অভিষেক পরিণত হয়েছেন কোহিনুরে: যোগরাজ সিংহ
যোগরাজ বলেন, যুবরাজের সহায়তা না পেলে অভিষেক শর্মার মতো প্রতিভা হয়তো হারিয়ে যেত। তিনি বলেন, ‘কিন্তু তারপর কী হল? যখন একটা হীরা আরেকটা হীরার হাতে পড়ে, তখন সেটা কী হয়ে যায়? কোহিনুরে রূপ নেয়। এটাই হয়েছে অভিষেক শর্মার ক্ষেত্রে। এই হীরাটা যদি কোনও ফালতু লোকের হাতে পড়ত, তাহলে সেটা ভেঙে চুরমার হয়ে যেত। ভারতে অনেক প্রতিভা এভাবেই হারিয়ে গেছে।’